Header Ads

Breaking News
recent

রুপকথা নয়, Jibon"জীবন"



সাজিদ-বিন-জাহিদ (মিকি)

সাধারণ সম্পাদক, Jibon"জীবন"
একটি রুপকথা লিখছি, তবে তা বাস্তবেও ফলেছে৷ এই রুপকথাটি থেকেই হাজারো রুপকথার সৃষ্টি৷ সময়টা ২০০৮ সালের৷ রাঙামাটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮জন ছাত্র--ছাত্রীদের মনে উকি দিচ্ছিলো এক অপার সম্ভাবনা, তারা একটি নতুন যুগের, নতুন স্বপ্নের পথে চলতে যাচ্ছিলো৷ পথপ্রদর্শকদের ভূমিকায় সিনিয়র গণিত শিক্ষক আনোয়ারুল কবির পাটোয়ারী গণিতের সূত্রের মতো মানবতার সমীকরণটাও তাঁর মিলাতে কষ্ট হয়নি বিন্দুমাত্র৷ স্যারের বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা, তাঁর বীরত্বের কথাগুলো স্যারের কল্যাণে সকলেরই জানা৷ একদিন স্যার জানালেন তাঁর বাবার জন্য জরুরী রক্তের প্রয়োজন৷ এখন ব্যাপারটা হলো, স্যার কর্মসূত্রে রাঙামাটি এবং স্যারের পরিবার নোয়াখালী৷ স্যারকে খুব বিচলিত হয়ে যেতে দেখলাম আমরা৷ রাঙামাটিতে মোবাইল সংযোগ এসেছে সবে৷ তাই সবার কাছে মুঠোফোন নেই, যাদের আছে তাঁরাও সকলে সকলের খোঁজ রাখেন এমনটা না৷ স্যার কিভাবে যেন রাঙামাটি বসেই নোয়াখালীতে রক্তের ব্যবস্থা করে ফেললেন৷ আশ্চর্য হতে হয়! এই ঘটনাটি আরো উদ্যোম যোগালো৷ ২০০৭ সালে আমি আমার নানুকে বিদায় জানিয়েছি৷ নানুর রক্তস্বল্পতা ছিলো৷ এ্যানিমিয়া নামক রোগে মৃত্যুবরণ করেছিলেন তিনি৷ রক্তস্বল্পতাই এই রোগের কারণ৷ তাই স্যারের ঘটনাটি খুবই মুগ্ধ করেছিলো৷ আমার কাছে তখন একটি ইন্টারনেট সংযোগসহ মোবাইল ছিলো তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকটায় সংযুক্ত ছিলাম৷ এর জন্য বাসা থেকেও বেশ বকা শুনেছি৷ স্যারও ব্যাপারে বাসায় অনেকবার অভিযোগ করেছিলেন৷ যাক কাজের কথায় ফিরে যাই৷ আমি নিজের রক্তের গ্রুপ জানতাম অনেক আগে থেকেই কিন্তু আমার অনেক বন্ধু জানতো না৷ স্যার আমাদের সকলের ব্লাড গ্রুপ জেনে নেয়ার পরামর্শ দিলেন৷ আমাদের অনেকেই ভয়ে তা করায়নি৷ এভাবেই কিছুদিন অতিবাহিত হয়৷ বৃত্তি পরিক্ষার সময় আমাদের এক বন্ধুর মারাত্মকভাবে মাথা ফেটে যায় এবং তাকে চিটাগাং পাঠিয়ে দেয়া হয়৷ শুনেছি তাকেও রক্ত গ্রহণ করতে হয়েছিলো৷ এতোদিনে আমাদের অন্যান্য বন্ধুরাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আওতায় চলে এসেছে৷ nimbuzz এর মাধ্যমে আমরা যোগাযোগ করতাম এবং বেশ জমে উঠতো৷ জীবন ব্লাড ডোনার গ্রুপ নামে একটা chat box ছিলো৷ এখানে আমরা বন্ধুদের রক্তের গ্রুপ জানা থাকলে তাদের যুক্ত করতাম৷ স্যারকে একদিন একজন ব্যাপারটি জানায় এবং তিনিও বেশ উৎসাহ দেখান আমাদের অবাক করে৷ একটা ছোট পরিসরের মিটিং করা হয় এবং আমাদের কাজ ভাগ করে দেয়া হয়৷ স্যারের কল্যাণে ২১ জনের একটা পরিবার দাঁড়িয়ে যায়৷ ২০১১ সালে আমরা প্রথম কমিটি ঘোষণা করি এবং আমাদের সংগঠন হিসেবে যাত্রা শুরু করি৷ যদিও কাজটি চলছিলো সেই ২০০৮ থেকেই৷ প্রথমে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই ভিন্নধর্মী উদ্যোগটি সকলের নজর কাড়ে এবং একাগ্রচিত্তে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাওয়ায় জীবন আজ রাঙামাটির নির্ভরতার অপর নাম৷ বিগত বছরে প্রায় ৩০০০ ব্যাগের উপরে রক্তের ব্যবস্থা করে দিয়েছে সংগঠনটি৷ এছাড়াও সৃজনশীল অন্যান্য কর্মকান্ডেও পৃষ্ঠপোষকতা করে যাচ্ছে সংগঠনটি৷ রাঙামাটির বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা নিজস্ব অর্থায়নে চালিয়ে নিচ্ছে সংগঠনটি৷ পার্বত্যাঞ্চলের সর্বপ্রথম অনলাইন ব্লাড ব্যাংক এটি যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাধ্যমেই সামাজিক কাজ করো৷ রুপকথার সেই আশ্চর্য প্রদীপের মতো যখন রক্তের দরকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে৷ যেখানেই নতুনত্ব সেখানেই জীবন৷ রাঙামাটিসহ দেশের ৫২টি জেলা শহরে জীবনের সাব-সেন্টার কলসেন্টারের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছে৷
[বি.দ্র: এই লেখাটি ২০১৭ সালের, ১৩ এপ্রিল প্রকাশিত ‘গিরিপ্রভা’ সাময়িকী থেকে সংকলিত]

No comments:

Powered by Blogger.